চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে কোন আসনে কত ভাড়া
পর্যটকদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের সঙ্গে তৈরি হয়েছে রেল যোগযোগ। বন্দর নগরী থেকে ট্রেনে এখন পর্যটনের নগরে যেতে সর্বনিম্ন ভাড়া পড়বে ৫৫ টাকা, আর সর্বোচ্চ ৬৯৬ টাকা।
বহুল আকাঙ্ক্ষিত এই রেলপথ শনিবার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে ঢাকা থেকে কক্সবাজারের রেল যোগাযোগও তৈরি হল।
রেল সচিব হুমায়ন কবির শুক্রবার জানান, ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সর্বনিম্ন ভাড়া হবে (নন এসি মেইল ট্রেনে) ১৮৮ টাকা এবং সর্বোচ্চ ভাড়া ওই ট্রেনের এসি বার্থে জনপ্রতি ১ হাজার ৭২৫টাকা।
আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা-কক্সবাজার পথে একটি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল শুরুর আশা করছেন রেল সচিব।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার রেলপথের মধ্যবর্তী সব স্টেশনের জন্য ভাড়া প্রস্তাব করেছে রেলওয়ের মার্কেটিং বিভাগ, যা অনুমোদন দিয়েছেন বাংলাদেশ রেলের মহাপরিচালক কামরুল আহসান।
রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রেলপথের দূরত্ব ১৫০ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার। এই পথে ছয়টি সেতুর জন্য ৩৮ দশমিক ১৩ কিলোমিটার বাড়তি দূরত্ব ধরা হয়; যাকে রেলের ভাষায় পন্টেজ চার্জ বলা হয়। সে হিসেবে এ পথের বাণিজ্যিক দূরত্ব ১৮৯ কিলোমিটার।
বর্তমানে ট্রেনে প্রতি কিলোমিটারের জন্য এসি শ্রেণির নির্ধারিত ভাড়া ১ টাকা ৯৫ পয়সা এবং নন এসি শ্রেণির জন্য ১ টাকা ১৭ পয়সা। তবে দেশে চালু থাকা লোকাল, মেইল, কমিউটার ও আন্তঃনগর এই চার রকম ট্রেনের জন্য ভাড়ার হারে কিছুটা তারতম্য আছে।
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত লোকাল ট্রেনের জন্য (দ্বিতীয় সাধারণ শ্রেণির) ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫ টাকা। মেইল ট্রেনে এই ভাড়া হবে ৭০ টাকা এবং কমিউটার ট্রেনের ক্ষেত্রে ৮৫টাকা।
এছাড়া সুলভ শ্রেণির আসনের ভাড়া হবে ১০৫ টাকা, শোভন শ্রেণির ভাড়া ১৭০ টাকা, শোভন চেয়ারের ভাড়া ২০৫ টাকা এবং প্রথম চেয়ার (সিটের) ভাড়া ৩১১ টাকা।
আর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে আন্তঃনগর ট্রেনে প্রথম বার্থের টিকেট ৪৬৬ টাকা, স্নিগ্ধা শ্রেণির ভাড়া ৩৮৬ টাকা, এসি সিটের ভাড়া ৪৬৬ টাকা এবং এসি বার্থের ভাড়া জনপ্রতি ৬৯৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সে হিসেবে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বাসের ভাড়ার তুলনায় ট্রেনের ভাড়া অনেক কম। বন্দর নগরী চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ননএসি বাসের ভাড়া ৩৭০ থেকে ৪২০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া সর্বনিম্ন ৮৫০ টাকা।
শুক্রবার কক্সবাজারের আইকনিক স্টেশন পরিদর্শনে গিয়ে রেল সচিব হুমায়ন কবির সাংবাদিকদের জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন শেষে আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করবে বলে আমরা আশা করছি।
“১ ডিসেম্বর শুধু আন্তঃনগর ট্রেন চালু হবে। পরে কমিউটার ও মেইল ট্রেনও চালু হবে। ভবিষ্যতে এই রুটে পর্যটক কোচ চালু করা হবে। শুধু ঢাকা নয়, উত্তরাঞ্চল ও দেশের অন্যান্য অংশ থেকেও কক্সবাজারে রেলপথে আসা যাবে। এতে যোগাযোগের নতুন পথ উন্মোচন হবে।”
বাংলাদেশ রেলের মহাপরিচালক কামরুল আহসান জানান, দিনে একটি ট্রেন ঢাকা থেকে রাত সাড়ে ১০টায় যাত্রা করে ঢাকা বিমানবন্দর এবং চট্টগ্রাম স্টেশনে বিরতি দিয়ে সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে কক্সবাজারে পৌঁছাবে। কক্সবাজার থেকে দুপুর ১টায় যাত্রা করে রাত ৯টা ১০ মিনিটে ঢাকায় ফিরবে। ফিরতি পথেও চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিমানবন্দরে যাত্রাবিরতি করবে।
১৫টি বগি নিয়ে ঢাকা থেকে যাত্রার সময় এই ট্রেনে আসন সংখ্যা হবে ৭৯৭টি। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আনা নতুন আধুনিক কোচ দিয়ে লাল-সবুজ রঙে সাজানো হয়েছে ট্রেনটি।
সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ টাকা
রামু থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত লোকাল ট্রেনের জন্য (দ্বিতীয় সাধারণ শ্রেণির) ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ টাকা।
নতুন নির্মিত দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার রেলপথ ট্রেনে অতিক্রম করতে লোকাল ট্রেনের ভাড়া পড়বে মাত্র ৪০ টাকা। মেইল ট্রেনে তা ৫৫ টাকা এবং কমিউটার ট্রেনে সেই ভাড়া ৬৫ টাকা।
এছাড়া দোহাজারী-কক্সবাজার পথে সুলভ শ্রেণির আসনের ভাড়া হবে ৮০ টাকা, শোভন শ্রেণির ভাড়া ১৩০ টাকা, শোভন চেয়ারের ভাড়া ১৫৫ টাকা এবং প্রথম চেয়ার (সিটের) ভাড়া ২৩৬ টাকা।
আর দোহাজারি-কক্সবাজার রুটে আন্তঃনগর ট্রেনে প্রথম বার্থের টিকেট ৩৫৭ টাকা, স্নিগ্ধা শ্রেণির ভাড়া ২৯৯ টাকা, এসি সিটের ভাড়া ৩৫৭ টাকা এবং এসি বার্থের ভাড়া জনপ্রতি ৫৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
দোহাজারী-কক্সবাজার নতুন এই রেলপথের মধ্যবর্তী নয়টি স্টেশনের ভাড়া অনুমোদন করেছে রেলওয়ের মার্কেটিং বিভাগ।